Header Ads

Header ADS

ইসলামে পাত্র নির্বাচন

  " ইসলামে পাত্র নির্বাচন " 

পাত্রী নিয়ে যত কথা বলা হয়, পাত্র নিয়ে তত কথা বলা হয় না। কারণটা পুরুষের সামাজিক আধিপত্য।

সবসময় ছেলেরাই পাত্রী পছন্দ করে, পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল না বললেই চলে।

যদিও এটা ধর্মীয়ভাবে স্বীকৃত এবং অত্যাবশ্যক।

পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে একটি বিয়ের ঘটনা উল্লেখ করবো। দেখা যাক, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষেরা কীভাবে পাত্র পছন্দ করেছেন।







মুসলিম নারীদের মধ্যে অন্যতম সম্মানিত নারী হলেন খাদিজা (রাঃ)। তিনি সম্মানিত রাসুলের স্ত্রী হিসেবে, সেই সাথে তার নিজের মহান কর্মকান্ডের কারণে।

মজার ব্যাপার হলো, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেননি। তিনিই মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

তিনি যখন রাসুল (সাঃ) কে বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন তাঁর বয়স ৪০। ইতোপূর্বে তার দু’বার বিয়ে হয়েছিল। তিনি ছিলেন বড় মাপের ব্যবসায়ী ও ধনী মহিলা।

বয়স ও অভিজ্ঞতায় তিনি ছিলেন পরিপক্ক। সুতরাং খাদিজা অল্পবয়সী কিশোরী তরুণিদের মত আবেগে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলার সুযোগ আমাদের হাতে থাকছে না। এছাড়া, তার ছিল সংসার করার অভিজ্ঞতা। এর আগে তার দু’বার বিয়ে হয়েছিল। একজন স্বামী মারা যান, আরেকজনের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

অতএব তিনি জানতেন, সংসার করার জন্য কেমন পুরুষ দরকার। সেজন্য তার বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করার কোন সুযোগ আমাদের হাতে নাই।

মক্কায় সেসময় অনেক ধনাঢ্য লোক ছিল। বড় ব্যবসায়ী ছিল। অনেক গোত্রপতি ছিল। খাদিজাকে বিয়ে করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল অনেকেই।

অপরদিকে মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন এতিম। চাচা আঃ মুত্তালিবের আশ্রয়ে লালিত। ২৫ বছর বয়সে তিনি নিজে তেমন একটা ধনীও ছিলেন না।

মুহাম্মাদ (সা) এর চাচা আবু তালিবের আর্থিক অবস্থাও সেসময় ভালো ছিলনা।

তবু কী কারণে তাঁকে পছন্দ করেছিলেন খাদিজা?

উত্তরটা হলোঃ তিনি পছন্দ করেছিলেন মুহাম্মাদের সততা, বিশ্বস্ততা এবং উত্তম চরিত্র।


মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বয়স যখন পঁচিশ বছর, তখন চাচা আবু তালিব একদিন তাঁকে ডেকে বললেনঃ ভাতিজা, আমি একজন বিত্তহীন মানুষ। সময়টাও আমাদের জন্য খুব সঙ্কটজনক। আমরা মারাত্মক অভাবের মধ্যে আছি। আমাদের কোন ব্যবসা বা অন্য কোন উপায়-উপকরণ নেই। তোমার গোত্রের একটি বাণিজ্য কাফেলা সিরিয়ায় যাচ্ছে। খাদিজা তার পণ্যের সাথে পাঠানোর জন্য কিছু লোকের খোঁজ করছে। তুমি যদি তার কাছে যেতে, হযতো তোমাকে সে নির্বাচন করতো।

তোমার চারিত্রিক নিস্কলুষতা তার জানা আছে। যদিও তোমার সিরিয়া যাওয়া আমি পছন্দ করিনা এবং ইহুদীদের পক্ষ থেকে তোমার জীবনের আশঙ্কা করি, তবুও এমনটি না করে উপায় নেই।

সেবছর মুহাম্মাদ (সাঃ) মজুরির বিনিময়ে খাদিজার বাণিজ্য কাফেলার দায়িত্ব নেন। এই সফরের সঙ্গীরা খাদিজার কাছে মুহাম্মাদের ব্যবহার ও চরিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেন। যদিও আগে থেকেই জানতেন, এবার খাদিজা মুহাম্মাদকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি তার একজন দূতের মাধ্যমে মুহাম্মাদ (সাঃ)কে বলেনঃ হে আমার চাচাতো ভাই! আপনার বিশ্বস্ততা, সততা ও উন্নত নৈতিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

খাদিজার প্রতিনিধি নাফিসা বিনতে মুনইয়া’র ভাষায়ঃ মুহাম্মদ সিরিয়া থেকে ফেরার পর তাঁর মনোভাব জানার জন্য খাদিজা আমাকে পাঠালেন। আমি তাঁকে বললামঃ মুহাম্মদ! আপনি বিয়ে করছেন না কেন? তিনি বললেন, বিয়ে করার মতো অর্থ তো আমার হাতে নেই।

বললামঃ যদি আপনাকে একটি সুন্দর প্রস্তাবের প্রতি আহবান জানানো হয়, অর্থ-বিত্ত, মর্যাদা ও অভিজাত বংশের প্রস্তাব দেওয়া হয়, রাজি হবেন? বললেনঃ কে তিনি? বললামঃ খাদিজা। বললেনঃ এ আমার জন্য কিভাবে সম্ভব হতে পারে? বললামঃ সে দায়িত্ব আমার।

তিনি রাজি হয়ে গেলেন।

পরে খাদিজা (রাঃ) নিজেই মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে কথা বলেন এবং তাঁর পিতার নিকট প্রস্তাবটি উত্থাপনের জন্য মুহাম্মাদকে (সাঃ) অনুরোধ করেন। কিন্তু মুহাম্মাদ (সাঃ) এই বলে অস্বীকৃতি জানান যে, দারিদ্র্যের কারণে হয়তো খাদিজার বাবা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবেন। অবশেষে খাদিজা নিজেই বিষয়টি তাঁর পিতার কাছে উত্থাপন করেন।

খাদিজা(রাঃ)র বাবা এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না। তিনি বলেছিলেনঃ তোমাকে আমি আবু তালিবের এই এতিমের সাথে বিয়ে দিব? আমার জীবনের শপথ! কক্ষণও তা হবে না।

কুরাইশ বংশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, আর মুহাম্মদের সাথে আমি তোমাকে বিয়ে দেবো?

পরে খাদিজা কৌশলে বাবার সম্মতি আদায় করেন, এবং বিয়ে সম্পন্ন হয়।


No comments

Theme images by mattjeacock. Powered by Blogger.